বলশেভিকরা রাশিয়ার ক্ষমতা নেওয়ার ১০০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত সপ্তাহে। ১৯১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লিওন ট্রটস্কি ছিলেন জেলে আর লেনিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ফিনল্যান্ডে। লেনিন তখন এক সাধারণ এক রেলওয়ে কর্মীর ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসেই জার নিকোলাসের পতন হয়েছিলো। ক্ষমতায় তখন অন্তবর্তীকালীন কেরেনস্কি সরকার। আলেকজান্ডার কেরেনস্কি তখন তুখোড় বক্তা, প্রবল জনপ্রিয়। কিন্তু, অচিরেই মস্কোতে ফিরলেন আরো এক জাদুকর, ১০ বছর ধরেই যিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, ভøাদিমির ইলিচ লেনিন। তার সঙ্গে যোগ দিলেন তার বন্ধুরা, শ্রমিকরা, কৃষকরা। অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যেই বলশেভিকরা কেরেনস্কি সরকাররকে উৎখাত করে রাশিয়ার ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। দুমাস আগেও পলাতক থাকা লেনিন নিজেকে আবিষ্কার করলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম দেশটির সর্বময় ক্ষমতায়। সারা দেশের ক্ষমতা তখন বলশেভিকদের হাতে চলে এসেছে। তারাই গড়ে তুলেছেন পরবর্তী আধুনিক রাশিয়াকে। পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলের এক দেশ, ধরতে গেলে পৃথিবী থেকে বিছিন্ন এই দেশটিকে এক মুহূর্তে তারা নিয়ে এলেন পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে।
যদিও বলশেভিক বিপ্লব নিয়ে অনেক বির্তক রয়েছে। বিপ্লবের পরবর্তীতে দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, নিজেদের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে। ট্রটস্কি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। লেনিনের মৃত্যুর পর সর্বময় ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন স্ট্যালিন এবং তাকে ইতিহাস চিহ্নিত করেছে একজন একনায়কতান্ত্রিক শাসক হিসেবেই। বলা হয় হিটলার ও স্ট্যালিনের সঙ্গে প্রকৃত অর্থে তেমন পার্থক্য ছিল না। দুজনই ভিন্নমত-পথকে শক্ত হাতে দমন করতে চেয়েছেন। হিটলার যেমন ছিলেন প্রচ- ইহুদি বিদ্বেষী, স্ট্যালিনও ছিলেন তেমন পুঁজিবাদী বিরোধী। নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার জন্য দুজনই গণহত্যা চালিয়েছেন।
তবুও বলশেভিক বিপ্লবকে বিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। বিপ্লবের পরবর্তীতে পশ্চাৎপদ রাশিয়াকে খুব দ্রুত আধুনিক একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। জোর দেয়া হয় শিল্প ও কলখারখানা গড়ে তোলার দিকে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, সাংস্কৃতিকভাবেও রাশিয়াকে পৃথিবীর সামনে খুব শক্তিশালী একটি দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে বলশেভিকরাই। শুধু রাশিয়া নয়, রাশিয়া তখন আরো অনেকগুলো দেশ অধিগ্রহণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা সংযুক্ত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছে।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত এ সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করে এসেছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর ১৫টি প্রজাতন্ত্র জন্ম হয়। তবু রাশিয়া এখনো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দেশ, এবং আজও পৃথিবীর এক শক্তিশালী দেশ হিসেবে টিকে আছে। আজকের পুতিনের যে রাজত্ব তা বলশেভিকদেরই অবদান। যদিও সেদিন বিপ্লবের মাধ্যমে বলশেভিকরা ক্ষমতা না নিতো তাহলে আজকে হয়তো রাশিয়া নামক দেশটির কোনো অস্তিÍত্বও থাকতো না। হয়তো তা শিকার হতো ঔপনিবেশিক বা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির। ফরেন পলিসি