বৈশাখ মাসের এই সময়টাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে চলে। এ সময় বজ্রপাতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এতে প্রাণহানীও হয় বহু মানুষের। আজকের এই লেখায় এমন কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরা হলো যাতে আপনারা বজ্রপাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন। সেইসঙ্গে বজ্রপাতের সময় কী কী করণীয় তা তুলে ধরা হলো।
উঁচু স্থানে থাকবেন না : উঁচু জায়গায় আপনি যদি সবচেয়ে ওপরের অংশে থাকেন তাহলে আপনার মাথাতেই বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এমন কোনো স্থানে যাবেন না, যে স্থানে আপনিই উঁচু। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যান। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে সরে যান।
পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় : সবচেয়ে ভালো হয় কোনো একটি পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারলে। এতে বজ্রপাত থেকে আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকুন : যে কোনো উঁচু গাছ থেকে দূরে থাকুন। তালগাছ সবচেয়ে উঁচু হওয়ায় প্রচুর বজ্রপাত হয় গাছটিতে । কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেবেন না। খোলা স্থানে, বিচ্ছিন্ন এযাত্রী ছাউনি, তালগাছ বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ধাতব বস্তু স্পর্শ করবেন না : বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করেও বহু মানুষ আহত হয়।
বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে সাবধান : বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখুন।
গাড়ির ভেতর : বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। গাড়ির কাচেও হাত দেবেন না।
জানালা থেকে দূরে থাকুন : বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন।
পুকুর বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে দুরে থাকুন : বজ্রপাতের সময় আপনি যদি কোনো পুকুরে সাঁতার কাটেন বা জলাবদ্ধ স্থানে থাকেন তাহলে সেখান থেকে সরে পড়ুন। পানি খুব ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। ফলে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ নৌকায় বা মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়।
নিচু হয়ে বসে থাকুন : যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ রাখুন। কিন্তু মাটিয়ে শুয়ে পড়বেন না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ : আপনার ওপর বা আশপাশে বজ্রপাত হওয়ার আগের মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে দ্রুত বজ্রপাত হওয়ার প্রস্তুতি নিন।
রবারের বুট পরুন : বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।