সারাবিশ্বে মার্চ মাসকে অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসাবে উদযাপন করা হয়। বলাই বাহুল্য উন্নয়নশীল দেশে অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রচুর। তবে উদ্বেগজনক হলেও সত্য আমাদের দেশেও এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক চিকিত্সা সরঞ্জামের সহজলভ্যতার কারণে অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সা সহজতর হয়েছে্।
অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সারের রোগ আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই কিছু পূর্ব ধারনা ও উপসর্গ সম্পর্কে ধারনা থাকলে রোগটি দ্রুত নির্ণয় করা সম্ভব হয় ফলে চিকিত্সাও তরান্বিত হয় এবং রোগীর জীবন সংশয় কমে। যে বিষয়গুলো সর্ম্পকে সচেতন হলে অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সারের পূর্বাভাস বা রোগ নির্ণয় দ্রুততর হয় সেগুলো সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানা প্রয়োজন এবং সে অনুযারী সতর্ক জীবন-যাপন করে সবল দীর্ঘজীবন নিশ্চিত করা সম্ভব।
যে সব বিষয় গুলো অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় তা হলো —
বয়স— পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন। যদিও পঞ্চাশ বছরের কম বযসী ব্যক্তিদের মধ্যেও বর্তমানে এ রোগের প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়।
অন্ত্র ও মলদ্বারের পলিপ— বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে পলিপ/পলিপগুলো ক্যান্সারে রুপান্তরিত হয়ে থাকে।
পারিবারিক ইতিহাস— বাবা-মা, চাচা-ফুপু, মামা-খালা, ভাই-বোনের (চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো) মধ্যে কেউ যদি অন্ত্র বা মলদ্বারের ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকেন তাহলে সে পরিবারের অন্য সদস্যদের অন্ত্র বা মলদ্বারের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
অন্ত্র ও মলদ্বারে কোষীয় পরিবর্তন ক্যান্সারের ইংগিত বহন করে। যেমন - বিভিন্ন ধরনের পলিপাস — Heriditary nonpolyposis coloreetal canaer. (HNPCC), Familial Adenomatous polyposis (FAP).
শরীরের অন্য কোন অংশে বিশেষ করে মহিলাদের জরায়ু ডিম্বানু বা স্তনে ক্যান্সার থাকলে অন্ত্র ও মলদ্বারে ক্যান্সার হতে পারে।
অন্ত্র ও মলদ্বারের প্রদাহ জনিত রোগ (ইনফ্লামেটরী বাওয়েল ডিজিজ)।
ধুমপান — অতিরিক্ত ধূমপান অন্ত্র ও মলদ্বারে ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
মদ্যপান ।
অতিরিক্ত প্রানীজ চবির্যুক্ত খাবার গ্রহন।
১০. আঁঁশযুক্ত খাবার গ্রহন না করা।
১১. মেদবহুল শরীর
প্রতিরোধ ঃ
সুস্থ সুন্দর জীবন- যাত্রা প্রনালী গ্রহন করলে অন্ত্র ও মলদদ্বারের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ধূমপান পরিহার করতে হবে , প্রতি পাঁচজনের একজন রোগীর অন্ত্র/মলদ্বারের ক্যান্সারের প্রধান কারন ধূমপান ।
মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে।
প্রানীজ চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করতে হবে ।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সারের লক্ষনসমূহ ঃ
মলে আকৃতিগত পরির্বতন (পূর্বে শক্ত ছিল এখন নরম অথবা বিপরীত আকৃতির মল)।
মলত্যাগের অভ্যাসে হঠাত্ পরির্বতন-কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ডায়রিয়া বা ডায়রিয়া থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য।
রক্তযুক্ত মলত্যাগ করা বা মলদ্বার দিয়ে শুধু রক্ত নিঃসরন হওয়া।
যে কোন রোগের সূত্রপাত হওয়া মাত্রই রোগটি ু নির্ণয় করা গেলে চিকিত্সা সহজতর হয়ে থাকে এজন্যে প্রয়োজন রোগ নির্ণয় পদ্ধতিগুলো অনুসরন করা ।
মলে রক্তের উপস্থিতি নির্ণয়
আংগুলের সাহায্যে মলদ্বার পরীক্ষা
সিগময়ডোস্কপি
কলোনোস্কপি
বেরিয়াম এনেমা ডাবল কনট্রাস্ট
ভার্চুয়াল কলোনোস্কপি।
অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সারের লক্ষণসমূহকে গুরুত ্বসহকারে বিবেচনা করে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ নির্ণয় পদ্ধতি অনুসরন করে অন্ত্র ও মলদ্বারের সুস্থতা/অসুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিন রোগমুক্ত সুন্দর জীবন যাপন করুন । অন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সার সচেতনতার মাসে চিকিত্সক হিসাবে এটাই আমাদের কাম্য।