এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭ হাজার ১৪৩ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। গত ১৩ নভেম্বর সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রে ‘ওপেন ডোর রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন এক্সচেঞ্জ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
মার্কিন ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫তম। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের তুলনায় বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিন শতাংশ। আর বিদেশে পড়ালেখা করা মার্কিন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে চার শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী চীনের। এ সংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৫৫ জন। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের শিক্ষার্থী ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৭ জন। শীর্ষ ২৫-এ থাকা দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ হচ্ছে নেপাল। ১১ হাজার ৬৯৭ শিক্ষার্থী নিয়ে তারা উঠে এসেছে তালিকার ১৩তম স্থানে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই যুক্তরাষ্ট্রে যান স্নাতক পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করার পর। এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০.৫ শতাংশ। আর স্নাতক পর্যায়ে পড়ালেখা করতে যান ২৫.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর বাইরে ১২.৮ শতাংশ অপশনাল প্র্যাকটিকাল ট্রেনিংয়ে যান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পড়ালেখা করতে যান বাকি ১.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।
মার্কিন বাণিজ্য দফতরের মতে, গত বছর মার্কিন অর্থনীতিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ২৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০-০১ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১০০। পরের সাত বছরে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩০০ জনে। এরপর থেকে এই সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে। ২০১৬-১৭ সালে এসে এই সংখ্যা এখন ৭ হাজার ১৪৩ জন।
‘ওপেন ডোর রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন এক্সচেঞ্জ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা দ্বিতীয় বছরের মতো মার্কিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এ বছর এই সংখ্যা ১০ লাখ ৮০ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় গত ১১ বছর ধরেই বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনটিতে।
এদিকে, ২০১৬ সালে ২ লাখ ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখার অনুমতি পাননি। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় তিন শতাংশ কম। ছয় বছর ধরে ওপেন ডোর প্রতিবেদন তৈরি করার পর এবারই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক কারণে এই বিষয়গুলোতে পরিবর্তন এসেছে। কখনো কখনো পড়ালেখার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
স্টেটস ফর পলিসি ইন দ্য ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্সের উপসহকারী মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে এখনো যুক্তরাষ্ট্র প্রথম। একই সময়ে মার্কিন শিক্ষার্থীরা যেন বাইরে পড়ালেখা করতে পারে, সেই চেষ্টাও করি আমরা।’
আইআইই প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী অ্যালান ই গুডম্যান বলেন, ‘স্থানীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা মেধাবীদের নেওয়ার প্রতিযোগিতা করে।’ তিনি বলেন, ‘যত দেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেবে, এই প্রতিযোগিতা ততই বাড়বে।’ যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ও সুযোগের কারণেই সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ালেখা করতে আগ্রহী হন বলে মনে করেন গুডম্যান।