কর চাহিদা বাড়তে থাকায় পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রবাসী নারী কর্মীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে নানা হয়রানি আর নির্যাতনের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরে আসতে বাধ্য হন অনেক কর্মী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানবন্দরে তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের ফিরে আসার কারণ খতিয়ে দেখে দায়ী এজেন্সি এবং নিয়োগকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এদিকে বিএমইটির মহাপরিচালক ড. সেলিম রেজা জানায় ,এমন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বিদেশে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা স্বপ্ন পূরণে পাড়ি জমাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। সরকারি হিসেব মতে এ পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশী নারী কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৬২ হাজার। যা পাঁচ বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় এক লাখ আশি হাজার সৌদি আরবে, আরব আমিরাত ও জর্ডানে এক লাখ ২৫ হাজার করে, লেবাননে এক লাখ তিন হাজার এবং ওমানে গেছেন প্রায় ৬২ হাজার কর্মী। তবে, হয়রানি, নির্যাতন আর পারিবারিক সমস্যাসহ নানা কারণে এদের একটি বড় অংশ নির্ধারিত সময়ের আগই দেশে ফিরতে বাধ্য হন।
ভুক্তভোগী এক প্রবাসী নারী শ্রমিক জানান, ভিসার মধ্যে লেখা বাংলাদেশি টাকায় ১৪ হাজার টাকা দিবে। গিয়ে দেখি সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। বাড়ির মহিলা মারত, তবে তাদের ছেলেরা শুনলে তারাও মারত। শরীর খারাপ একটু শুয়ে থাকার বললেও তারা বলেন, টাকা দিয়ে কিনে এনেছে কোন শুয়ে থাকা হবেনা।
বেসরকারি এক গবেষণায় জানা যায়, নারী কর্মীদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, নির্ধারিত বেতন না দেয়া, দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজে বাধ্য করা, অসুস্থ হয়ে পড়াসহ নানা কারণে তারা ফিরে আসতে বাধ্য হন। তবে সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। এদিকে ব্যক্তি খাতের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখে নারী শ্রমিকের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
এ সম্পর্কে বোমসার পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ফিরে আসার নারীদের কোন ডাটাবেজ তৈরি হয়নি। ডাটাবেজ তৈরি করে দেখা দরকার আমার কতটা শ্রমিক সময় পূরণ হওয়ার পর ফিরে এসেছে। কতজন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আসছেন।’
এদিকে এ অবস্থায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে ফিরে আসা কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানায় বিএমইটির মহাপরিচালক।
জনশক্তি রপ্তানি পরিচালক মোহাম্মাদ গিয়াসউদ্দিন বাবুল বলেন, এখান থেকে যদি লেবাননে ১০০ জন যায়, ৮০ জন নির্যাতনে ফিরে আসে। এছাড়াও সৌদি আরবে ২০-৩০ জন ফিরে আসে।
যারা নির্যাতনের স্বীকার হয়ে যারা বিদেশ থেকে ফেরত আসেন। তাদের যদি বিমানবন্দরে ফ্রান্জ করার ব্যবস্থা করা হতো। তাহলে দেখা যেত তিনি কত তারিখে বাইরে গেলেন এবং কত তারিখে ফিরে আসলেন। আর ওই ডাটাবেজ দেখলে সে কী তার চুক্তি শেষ করে আসল না আগে চলে আসলো তা বোঝা যাবে।
বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে প্রবাসী নারী শ্রমিকের এ সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন তিনি।