এদের কেউ-ই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি, উবার ডাকা কিংবা বারে গিয়ে কিছু অর্ডার করার মতোও তাদের বয়স হয়নি। যে বয়সে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া আর মাঠে খেলাধূলা কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকে সেই বয়সী চার কিশোরের বদলে দেয়ার মতো উদ্ভাবনী চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। এরা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিনসের কিয়েনা কেভ, ভারতের রিফাত শাহরুখ, যুক্তরাষ্ট্রের হান্নাহ হারবস্ট এবং মেক্সিকোর জুলিয়ান রিওস।
২০১০ সালে মেক্সিকো একটি তেল স্থাপনায় বিস্ফোরণের পর পানিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কয়েক লাখ ব্যারেল তেল। ঐ তেল ছড়িয়ে পড়েছিল সমুদ্র পৃষ্ঠের বিশাল এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ উপকূলে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামুদ্রিক জীবের বসতি। তেলের আস্তরণের ৪০ কিলোমিটার দূরে লুইজিয়ানায় অগণিত ডলফিন, মাছ আর পাখির মৃত্যু হয়েছিল। ঐ দুর্ঘটনা যখন ঘটে নিউ অরলিনসের কিয়েনা কেভ খুবই ছোট। কিন্তু টিভিতে খবর দেখে মর্মাহত হয়। বিষয়টি তার কোমল মনে দাগ কেটে যায়। এরপর স্কুলে পড়ার সময় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তেল কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে কীভাবে দ্রুত নিষ্কৃতি মেলে তা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। সেটি নিয়ে রীতিমতো গবেষণায় নেমে পড়ে কিয়েনা। গবেষণা করতে গিয়ে দেখতে পায় সাগরের পানিতে এভাবে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর মূলত সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির সাথে বিক্রিয়ায় পানি হয়ে পড়ে কারসিনোজেনিক বা ক্যান্সার উৎপাদক। এই সমস্যা থেকে দ্রুত উত্তোরণেরও উপায় বের করেছেন ১৫ বছরের মেয়ে কিয়েনা। এখন তার বয়স ১৮। এই বিষয়ে শীঘ্রই গবেষণা পত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। ছোট একটা স্টার্ট আপও চালু করেছেন। আর তার এই প্রকল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইতিমধ্যে ১২ লাখ ডলার তহবিলও পেয়েছেন। কিয়েভের এই গবেষণা থেকে হয়তো এমন কিছু একটা পৃথিবীর মানুষ পাবে যা এই ধরনের তের বিস্ফোরণে ক্ষতিকে অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
কিয়েভের মতোই আরেক মেধাবী ভারতের রিফাত শাহরুখ। প্রাথমিক স্কুলে থাকার সময় থেকেই মহাকাশ নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ আর উত্সাহ থেকে রিফাত শাহরুখ জায়গা করে নেন স্পেস কিডজ ইন্ডিয়াতে। আরো কয়েকজন কিশোরকে নিয়ে গত দুই তিন বছর ধরে রিফাত স্যাটেলাইট তৈরির চেষ্টা করেছেন। অবশেষে রিফাত তৈরি করেন বিশ্বের সবচেয়ে হালকা স্যাটেলাইট ‘কালামস্যাট’। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালামের নামে নামকরণ করেছেন স্যাটেলাইটটি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘কিউব ইন স্পেস’ শীর্ষক এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় রিফাতের ৬৪ গ্রাম ওজনের খুদে স্যাটেলাইটটি। ২০১৭ সালের জুনে ভার্জিনিয়াতে এর সফল উেক্ষপন করেছে নাসা। রিফাতের হালকা স্যাটেলাইটটি মাইক্রো মধ্যাকর্ষণ পরিবেশে ১২ মিনিট ধরে কার্যকর রাখা হবে।
যুক্তরাষ্টের ফ্লোরিডার মেয়ে হান্নাহ হারবাস্ট। ছোটবেলায় ইথিওপিয়ার এক কলম বন্ধুর কাছে যখন শোনে তাদের দেশে বিদ্যুত্ সমস্যা প্রকট তখন রীতিমতো বিস্মিত হয় হান্নাহ। কলম বন্ধুর দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা করার জন্য ভাবতে থাকেন। এরপর মাত্র ১৫ বছর বয়সেই হান্নাহ তৈরি করে ফেলে বিদ্যুতের অন্য রকম এক উত্স। সাগরের ঢেউ থেকে বিদ্যুত্ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন হান্নাহ।
মেক্সিকোর মেয়ে জুলিয়ান রিওস মায়ের স্তন ক্যান্সারের ঘটনায় মর্মাহত হয়ে তৈরি করে ফেলেন ইভা ব্রা। মূলত কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে উপসর্গ দেখে আগেই সেটা শনাক্ত করতে পারে এই ব্রা। আঠারো বছর বয়সী জুলিয়ানের দাবি, কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে এই ব্রা ক্যান্সারের উপসর্গ দেখে আগেই সেটা শনাক্ত করতে পারবে। এই ব্রা’র নাম দেয়া হয়েছে ‘ইভা ব্রা’। এই ব্রা আবিষ্কারের সঙ্গে থাকা আরো দুই জনকে নিয়ে একটি কোম্পানি খুলেছেন জুলিয়ান। তার এই উদ্ভাবনী ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে পৃথিবীর লাখো নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।