খালেদা জিয়ার জামিন রায়ের সত্যায়িত অনুকোনো আদালত কর্তৃক ঘোষিত মামলার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি কতদিনের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে সে বিষয়ে প্রচলিত কোনো আইনে নির্ধারিত সময়ের উল্লেখ নেই। ফলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের অনুলিপি কবে নাগাদ সরবরাহ করা হবে তা নিশ্চিত নয়। অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আদালত যুক্তিযুক্ত সময়ের মধ্যে রায়ের কপি সরবরাহ করবে। কিন্তু এই ‘যুক্তিযুক্ত’ সময়ের কোনো ব্যাখ্যা আইন ও বিধি-বিধানের কোথাও নেই। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ক্রিমিনাল রুলস অনুযায়ী রায় ঘোষণার পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সত্যায়িত অনুলিপি সরবরাহ করতে হবে। এ দাবি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বিশিষ্ট আইনজীবী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ওই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, আইনানুযায়ী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
ওই আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৩৭১ ধারায় বলা হয়েছে, “আসামি আবেদন করিলে রায়ের অনুলিপি অথবা সে চাহিলে ও সম্ভব হইলে তাহার নিজের ভাষায় বা আদালতের ভাষায় উহার একটি অনুবাদ তাহাকে অবিলম্বে দিতে হইবে।” আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কতদিনের মধ্যে রায়ের অনুলিপি দিতে হবে সেটা আইনে নিদ্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। এছাড়া বিচারক অনেক সময় রায়ে করণিক কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করে থাকেন। যার কারণে অনেক সময় রায়ের অনুলিপি পেতে বিলম্ব হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে সিআরপিসির ৩৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, “এই বিধিতে বা বর্তমানে বলবত অপর কোন আইনে, ভিন্নরূপ বিধান না থাকিলে কোন আদালত রায়ে স্বাক্ষর করিবার পর কেরানীর ভুল সংশোধন করা ব্যতীত উহা পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা করিবেন না।” ওই আইনজীবী বলছেন, আইনের উপরে বিধির কার্যকারিতা প্রাধান্য পায় না।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায়ের পরই আইনজীবীরা সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে আদালতে আবেদনে করেন। আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, আইনানুযায়ী সম্পূর্ণ রায় প্রস্তুত করেই বিচারককে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষণা ও তাতে স্বাক্ষর করতে হয়। সেই হিসাবে দ্রুতই রায়ের অনুলিপি পাওয়ার কথা।
এদিকে শিগগিরই সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বিচারক নিয়োগের পরই নিয়মানুযায়ী প্রধান বিচারপতি কর্তৃক বেঞ্চ পুন:র্গঠনের প্রথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে পুন:র্গঠনকৃত বেঞ্চে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথাও বলছেন কেউ কেউ। এদিকে যে মামলায় খালেদা জিয়া দন্ডিত হয়েছেন সেটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলা। দুদকের মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টে কিছু সংখ্যক বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার কর্তৃত্ব রাখেন না। কারণ এক বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কাউকে বিচারিক আদালত জামিন দিতে পারেন না। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ জামিন কর্তৃত্বের অধিকারী। অর্থাত্ খালেদা জিয়াকে জামিন পেতে হলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে।