ভাটির মুখেই নিকলী। কিশোরগঞ্জের একটি উপজেলা। সেই ভাটির তনয়া শবনম মুস্তারী। ডাকনাম স্বর্ণা। ছোট থেকেই আয়না তাকে টানত। আর আয়নার সঙ্গে কথা বলতে বলতে একসময় তিনি উপলব্ধি করলেন, ‘মানুষ হিসেবেই হবে আমার পরিচয়, নারী বা মেয়ে হিসেবে নয়।’
জলরাজ্যের বিশালতা থেকেই তিনি শিক্ষা নেন। ভাটির মেয়েরা শুধু ঘরের ও রান্নার কাজে গৃহবন্দি হয়ে থাকবে না। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির সুনাম বয়ে আনবে। সেই ভাবনা নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হন স্বর্ণা। প্রতিনিয়ত এই নাট্যশিক্ষা তাকে নতুন করে তৈরি করে।
নাট্যশিক্ষা শুধু মঞ্চে অভিনয় করার শিক্ষাই দেয় না, সৃজনশীল ভাবনার বিকাশও ঘটায়। নিজের প্রতি, দশের প্রতি ও দেশের প্রতি সচেতন করে তোলে। শেকসপিয়ারের মতে, ‘পৃথিবীটা যদি রঙ্গমঞ্চ হয়, তাহলে প্রত্যেকের দিক থেকে আমরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, বাকিরা দর্শক।’
স্বর্ণা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে যেই সাবজেক্টে পড়াশোনা করে, সেই বিষয়ের কর্মক্ষেত্র খুুবই কম পেয়ে থাকে। একইভাবে নাট্যকলায় পড়াশোনা করে সবাই শুধু অভিনয়ই করবে, এমনটি নাও হতে পারে। তবে যে কাজই করি না কেন, সেই কাজে যেন সাড়া জাগাতে পারি। যেকোনো কাজে ঢুকে চূড়ান্তভাবে মেধাবী হয়ে বেরুনোর দম তৈরি করে এই নাট্যশিক্ষা। পানের দোকানদার হলেও ক্রেতা যেন সেই দোকানে পান খেতে আসতে বাধ্য হয়। দোকানটাই এখানে পৃথিবী নামক মঞ্চের সেট, পান হলো প্রপস আর বাকিরা দর্শক। পান যদি ভালো হয়, তবেই লোকজন কিনতে আসবে। ঠিক তেমনি অভিনয় যদি খারাপ হয়, দর্শক আসবে না দেখতে।’
ছোট থেকে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন দেখেছেন স্বর্ণা। থিয়েটারে ফ্যাশনভাবনার সমন্বয় করার স্বপ্ন পূরণের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় আছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘দিনটি অবশ্যই আসবে। নাট্যশিল্পের শিক্ষা নিয়ে পৃথিবীর সমস্ত ফ্রেমে যেন নিজেকে যোগ্যতম হিসেবে দাঁড় করাতে পারি। এমনটাই প্রত্যাশা।’