ডিটিভি বাংলা নিউজঃ রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দুই নগর পিতা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মহানগরীতে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। উত্তর সিটি করপোরেশন বছর দেড়েক আগেই তাদের এলাকায় থাকা সব বাণিজ্যিক বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু জায়গায় বিলবোর্ড উচ্ছেদ করলেও সংস্থাটির আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে এখনও অবৈধ বাণিজ্যিক বিলবোর্ড চোখে পড়ে। ডিএসসিসির খাতা-কলমে কোনো না থাকলেও বাস্তবে সংস্থাটির আওতাধীন অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধ বিলবোর্ড রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, খিলগাঁও রেলগেট, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর মোড়, পুরান ঢাকার ইংলিশ রোড, যাত্রাবাড়ি মোড়, মালিবাগ ও নিউমার্কেটসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অর্ধশতাধিক অবৈধ বিলবোর্ড রয়েছে। এসব বিলবোর্ডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও ঝুলছে। অভিযোগ আছে, বিলবোর্ডগুলো সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের সাথে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সমস্ত চুক্তি বাতিল করার পর কোনো বিলবোর্ড কিংবা পণ্যের বিজ্ঞাপন থাকার আইনগত সুযোগ নেই। তবে এখন যেসব অবৈধ বিলবোর্ড আছে সেগুলো দ্বিগুণ দামে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আগে যেখানে সাত থেকে আট লাখ টাকায় ভাড়া হতো, এখন সেখানে বছরে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়। তবে এসব বিলবোর্ড ভাড়ার টাকা সিটি করপোরেশনের কোষাগারে যাচ্ছে না। যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পকেটে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল তার কার্যালয়ে ইত্তেফাককে বলেন, ডিএসসিসি এলাকার একটি বিলবোর্ডও থাকার কথা না। বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে ডিজিটাল বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এখনও যদি কোনো বিলবোর্ড থেকে থাকে তা সবই অবৈধ। এ সময় তিনি বিলবোর্ডের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইফসুফ আলী সরদারের কাছে বিলবোর্ডের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান। ইফসুফ আলী সরদার বলেন, আমরা প্রায় সব বিলবোর্ড কেটে ফেলেছি। বাকিগুলো অকশন করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত বিলবোর্ডগুলো কাটার যন্ত্র না থাকায় বিপাকে পড়েছি। জানা যায়, রাজধানীর অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত অবৈধ বিলবোর্ড বাণিজ্যকে ঘিরে ছিল প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য। অন্যদিকে যেখানে-সেখানে বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার ঘটনা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২০০৬ সালের ১৬ জুন কুড়িল বিশ্বরোডের একটি ফিলিং স্টেশনে বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে দুইজন নিহত হয়। ২০১০ সালের ১৫ মার্চ ঝড়ে গুলশানে বিলবোর্ড ভেঙে চারটি গাড়ির ওপর পড়লে গাড়ি চাপায় দুইজন নিহত হয়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত মেয়রদের দায়িত্ব গ্রহণের পরে ২০১৫ সালে বিলবোর্ড উচ্ছেদে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কয়েকবার আল্টিমেটাম দিয়ে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এরপর থেকে আর নতুন কোনো বিলবোর্ডের অনুমোদন দিচ্ছে না দুই সংস্থা। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ডিজিটাল বোর্ড স্থাপনের পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, মোড়ে এবং রাস্তার পাশে ডিজিটাল স্থাপনা নির্মাণ করেছে।