অরক্ষিত হয়ে পড়েছে রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কলোনির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভিআইপিদের আবাস জোন হিসেবে পরিচিত এই কলোনি চত্বরে ঢুকে পড়েছে মাদক। মাদকসেবীরা স্থানীয় পুকুর পাড়ে তাদের নানা অপতত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ কলোনির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় এখানে স্থাপিত হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের অনেকটা নিষ্ক্রিয়তায় এখানে নানা সমস্যার পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে অনিরাপত্তা। এখানে ছিনতাই, ছাত্রী ও অভিভাবকদের উত্ত্যক্তসহ নানা অপতত্পরতা চলছে। এছাড়া নানা দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে কলোনিতে।
জানা গেছে, সরকারি এই কলোনিতে জাস্টিস কোয়ার্টারসহ সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিব, পুলিশের এডিশনাল আইজি, ডিআইজি, এসপিসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের উচ্চপদস্থ কয়েকশ কর্মকর্তার পরিবারের বাস এখানে।
সরেজমিন দেখা যায়, আজিমপুর কলোনির উত্তর পাশে একটি বিশাল পুকুরের পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর পানি নিলচে রং ধারণ করেছে। এতে ভাসছে ময়লা-আবর্জনা। স্থানে স্থানে পলিথিন। পুকুরের চারপাশ রেলিং দিয়ে ঘিরে রাখা হলেও তা টপকে ভিতরে ঢুকছে বখাটে যুবকরা। আবার রেলিংয়ের রড চুরি হয়ে গেছে কয়েক স্থান থেকে। প্রকাশ্যেই চলছে মাদক সেবন। মাদকসেবীরা ছাত্রী এবং অভিভাবকদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছে। মাঝে মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। সর্বোপরি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আজিমপুর কলোনির অভিজাত বাসিন্দারা।
গত মঙ্গলবার আজিমপুর কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, কলোনির উত্তর পাশে বিশাল একটি পুকুর। যা কি না স্থানীয়দের কাছে পার্টি হাউজ জামে মসজিদ পুকুর নামে পরিচিত। পুকুরটির আয়তন প্রায় তিন একর। পুকুরটির পশ্চিম পাশেও একটি খেলার মাঠ রয়েছে। এখানেও কারণে-অকারণে আড্ডা বসে। অথচ এই মাঠের পাশেই রয়েছে সচিবদের জন্য নির্মিত কামিনী ভবন। বহুতল এই ভবনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করেন।
বিশেষ করে পুকুরের চারপাশে বহিরাগত ছেলে-মেয়েরা আড্ডা জমায়। সন্ধ্যার পর এখানে মাদকসেবীরা আড্ডা বসায়। তাদের মধ্যে মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটে। মূলত যাদের জন্য এই পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, কার্যত তারাই এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুকুরটির সৌন্দর্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পুকুরের চারপাশে ওয়াকওয়েতে ফাটল ধরেছে। সর্বোপরি তিন কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিদিনই এখানে আড্ডা দেয় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা। বহিরাগতরাও আসে। মাদকসেবীদের বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, কলোনির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বিধানে সতর্ক রয়েছে আজিমপুর ফাঁড়ি পুলিশ।
আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ পুকুরটির দুরবস্থার জন্য কলোনির বাসিন্দাদের দায়ী করে বলেন, সৌন্দর্য বিনির্মাণের দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু এটি রক্ষার দায়িত্ব সোসাইটির কর্মকর্তাদের। প্রকল্পের দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সেই সময়ে সাইদুর রহমান নামে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী এর দায়িত্বে ছিলেন। তখন প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি হয়ে ছিল কি না সে বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।