শান্তি ও সম্প্রীতিতে নারীর ভূমিকা নিশ্চিতকরণে চাই কর্মপরিকল্পনা
20, February, 2018, 1:12:28:AM
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ১৩২৫-এর বাস্তবায়নে বাংলাদেশে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার দাবি জানিয়েছেন বিজ্ঞজন।
তারা বলেছেন, সংঘাতময় বিশ্বে নারী যে সংকট মোকাবিলা করছে তার প্রতিবিধানে ২০০০ সালের ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রেজুলেশন ১৩২৫ গ্রহণ করে। ২০১০ সালে এর ফ্রেমওয়ার্ক হয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সকল নীতিমালা তৈরি, বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের সম্পৃক্তকরণ, সিদ্ধান্তগ্রহণ-প্রক্রিয়ায় নারীদের সমঅংশগ্রহণ, লিঙ্গভিত্তিক তথ্য সংরক্ষণ এবং শান্তি ও নিরাপত্তার জেন্ডার প্রেক্ষিত গবেষণা করা রেজুলেশন ১৩২৫-এর অন্যতম বিষয়। তাই শান্তি ও সম্প্রীতিতে নারীর ভূমিকা নিশ্চিত করতে এর কর্মপরিকল্পনা জরুরি।
গতকাল সোমবার ইত্তেফাক ভবনে অনুষ্ঠিত ‘শান্তি ও সম্প্রীতিতে নারী’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ দাবি জানান তারা। ইউএন উইমেন-এর সহযোগিতায় যৌথভাবে গোলটেবিল আয়োজন করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ও দৈনিক ইত্তেফাক।
বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক ইত্তেফাক-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য ডাক্তার সারোয়ার আলী, গবেষক অধ্যাপক সালমা আক্তার, শ্রমিক আন্দোলন কর্মী জলি তালুকদার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরীফা রহমান রুমা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানিয়া হক ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান, অভিনয় শিল্পী আফরোজা বানু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপিএসএর উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী।
তাসমিমা হোসেন ইউএন উইমেন কর্তৃক ২০০০ সালে ১৩২৫ রেজুলেশন করে ১০ বছর পরে ফ্রেমওয়ার্ক করায় শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের কর্মপরিকল্পনা করতে আরো বেশি সময় লাগবে। তারপরও কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ৯৭ সালে তৃণমূল পর্যায়ে নারী কাউন্সিলরের সরাসরি নির্বাচন দেয়, যা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বড় পদক্ষেপ।
ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি শান্তি ও সম্প্রীতিতে নারীর ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে নারীকে মানুষ হতে হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক শিক্ষায় জায়গাটা ক্ষীণ হয়ে গেছে। ধর্মীয় শিক্ষা থাকলেও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা নেই, ছেলে-মেয়ে উভয় এখন নেশা করে। বর্তমান সরকার নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সকল ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। তাই সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকার ওপর জোর দেন তিনি।
রোকেয়া কবির বলেন, আজও ঘরে ৮৭ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার। বাসে নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তারপরও কি দেশটা নারী বা সংখ্যায় স্বল্পদের হয়েছে? হয়নি, তাইতো আজও নারী রাতে বাইরে বের হতে পারে না। ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ে। আমরা এ অবস্থা পরিবর্তনে সবাই মিলে কাজ করবো।
ডাক্তার সারোয়ার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নারী বলতে ধর্ষিতা নারীর চিত্র আসে। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম পুরুষ শূন্য ছিল নারী রক্ষা করেছে। নারী প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার হলেও সমাজের সব শ্রেণির চিত্র এক নয়। আবার সরকার যেমন হেফাজতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সে সরকারই পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত করে। সরকার একটি দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে।
অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, নারী-পুরুষের সম্মান পরিবার থেকেই শিখতে হবে। আমাদের পাঠ্য-পুস্তকে এ শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। আমরা কোনো চাপের কাছে যেন মাথা নত না করি।