একটা সময় ফাস্ট বোলারদের কতই না অভাব ছিল বাংলাদেশের। বাউন্সি পিচেও কোয়ালিটি পেসারের শূন্যতা অনুভব করতো টাইগাররা।
ছয় বছর আগে জ্যামাইকায় দক্ষ ফাস্ট বোলারের অভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান (দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬/৬৩) ও মেহেদী হাসান মিরাজের (৭/১৩৮) দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও আবু জাইদ রাহি আর কামরুল ইসলাম রাব্বির জেন্টাল মিডিয়াম পেস দিয়ে ক্যারিবীয়দের বধ করা সম্ভব হয়নি।
এখন নাহিদ রানার ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে অবিরাম বল করা, হঠাৎ হঠাৎ প্রচণ্ড গতির বাউন্সার সামলাতে ব্যতিব্যস্ত ছিল ক্যারিবীয় ব্যাটাররা। তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদের ১৪০ কিলেমিটার গতির সাথে সুইংয়ের মিশেল সামলানোও ছিল কঠিন কাজ।
ক্যারিবীয় ব্যাটাররা মূলত ফাস্ট বোলিং তোপ সামলাতে না পেরেই প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট হয়। ২১ বছরের তরুণ রানা একাই শিকার করেন ৫ উইকেট।
তাইজুল ইসলাম ফিনিশিং টাচ (দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৫০) দিলেও অনেকেই রানার প্রথম স্পেলের ওই আগুন ঝরানো বোলিং স্পেলকেই খুব করে দেখছেন। টেস্ট শেষে রানাকে নিয়েই বেশি কথা। ডানহাতি পেসারের বোলিংয়ের প্রশংসাই সবার মুখে।
কিন্তু জাতীয় দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করা খালেদ মাহমুদ সুজন কাউকে একক কৃতিত্ব দিতে চান না। বিসিবির পদত্যাগ করা এই পরিচালক মনে করেন রানা একা নন; তাসকিন, হাসান মাহমুদও টেস্ট জয়ে রেখেছেন বড় অবদান।
সুজনের মতে, তিন ফাস্ট বোলারই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটারদের ক্রমাগত চাপে রেখেছেন। তাদের বোলিংটাই জ্যামাইকায় গড়ে উঠেছে টাইগারদের জয়ের ভীত।
জাতীয় দলের সাবেক ম্যানেজার ও সাবেক টিম ডিরেক্টর বলেন, ‘আমি জ্যামাইকা টেস্ট দেখে খুব অভিভূত। অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে বলবো না। কিন্তু যদি দেখেন- পেস বোলারদের মধ্যে হাসান মাহমুদ, তাসকিন আর নাহিদ রানা তিনজনই দারুণ বোলিং করে ক্যারিবীয়দের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নিয়েছে। এ টেস্ট না খেললেও বাঁহাতি শরিফুল আছে ফাস্ট বোলিং ইউনিটে। সব মিলে ভালো একটি পেস বোলিং ইউনিট।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাসকিন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সিনিয়র বোলার হিসেবে দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। নাহিদ রানা আর হাসান মাহমুদ তাকে দারুণ সাপোর্ট দিচ্ছে। রানা খুবই তরুণ। মাত্র শিখছে। হাসানও তরুণ। তারও এখন ওপরে ওঠার সময়। সব মিলে ফাস্ট বোলিংয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ খুব ভালো।’
রানা ও হাসান মাহমুদকে নিয়ে কেন উচ্ছাস প্রকাশ করলেন না- এর উত্তর দিতে গিয়ে সুজন বোঝানোর চেষ্টা করেন, রানা ও হাসান মাহমুদ দুজনই তরুণ। বয়সে নবীন। তাদের পারফরম্যান্সে দারুণ সন্তুষ্ট তিনি। কিন্তু এখনই দুই তরুণকে নিয়ে বাড়তি উচ্ছাস প্রকাশের কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।
সুজনের ব্যাখ্যা, ‘আমার মনে হয়, নাহিদ রানা ও হাসান দুজনই বয়সে নবীন। দারুণ কাজ করছে। দলে অবদান রাখছে। ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রতিপক্ষ শিবিরে ভয় ধরানো, সমীহ জাগানো ও ব্রেকথ্রু দেওয়া সবই করে দেখাচ্ছে রানা ও হাসান। কিন্তু আমি মনে করি, এর চেয়ে অনেক ভালো কিছু করার সামর্থ্য আছে নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদের। ওরা এখনই ম্যাচ উইনার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা সবে ম্যাচ জেতানো শুরু করেছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক ম্যাচ জেতাবে। আমার বিশ্বাস, দুজনই অনেক দূর যাবে। এক সময় রানা আর হাসানের হাত ধরেই আমরা জিতবো। বাংলাদেশের সত্যিকার ম্যাচ উইনার হওয়ার সব যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে দুজনেরই। অল্প কয়টা টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা। আরও টেস্ট খেলবে। অভিজ্ঞতা বাড়বে। ম্যাচ কন্ডিশনে করণীয় ও নিজেকে মেলে ধরার ক্ষমতাও বাড়বে।’