বাংলাদেশের ফুটবলারদের ফিটনেসের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। দেশের ফুটবলের সবচেয়ে পাগলা সমর্থকেরও কথাটির বিরোধিতা করার সাধ্য নেই।
বিষয়টি তো দিনের আলোর মতোই সত্য। তবে এক দল তরুণ এবার কথাটির প্রতিবাদ করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, তারা প্রমাণ করেছে, ‘সবাই এক গোয়ালের নয়। কিছু ব্যতিক্রমও আছে’। ব্যতিক্রম দলটির নাম আরামবাগ।
গত শনিবার চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০ গোলে হারিয়ে যারা প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের শিরোপা জিতেছে।
ক্লাবটির ৬০ বছরের ইতিহাসে যা প্রথম বড় শিরোপা। এতেই তো বোঝা যায় এই আরামবাগ ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রম দল হয়ে ওঠার পেছনের রহস্য এক কথায় ফিটনেস। ৯০ মিনিটের ম্যাচে তারা গড়ে কত কিলোমিটার দৌড়েছে, শুনলে চোখ কপালে উঠে যাবে।
সংখ্যাটা ১২ কিলোমিটার! ভাবা যায়? ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০১৬-১৭ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি দৌড়েছেন টটেনহামের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন ও লিভারপুলের জর্ডান হ্যান্ডারসন। তারাও গড়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার দৌড়েছে। সর্বোচ্চ দৌড়ানো খেলোয়াড়টির গড়ই যখন ১২, দলের তো নিশ্চয় এর চেয়ে বেশি নয়।
এক দল আনকোরা তরুণকে নিয়ে মৌসুম শুরু করেছিলেন দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হক। রেলিগেশন এড়ানোই ছিল যাদের লক্ষ্য। বারো দলের মধ্যে অষ্টম হয়েছে তারা। ক্যাম্প দেরিতে শুরু করায় লিগের প্রথম পর্বে সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি তারা। কিন্তু যতই সময় বেড়েছে, জ্বলে উঠেছে তারুণ্যর দীপ্তি। ফল মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন।
মৌসুমের শেষ দিকে যে ফিটনেস ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জের, সে চ্যালেঞ্জটাই জিতে শিরোপা ঘরে তুলেছে আরামবাগের তরুণেরা। এই যাত্রায় কোয়ার্টার ফাইনালে তারা হারিয়েছে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডকে। সেমিফাইনালে হারিয়েছে রানার্সআপ শেখ জামালকে। কাকতালীয়ভাবে ফাইনালে হারিয়েছে লিগের তৃতীয় দল চট্টগ্রাম আবাহনীকে।
এই সাফল্যের পেছনে ফিটনেসকেই সামনে আনলেন দলের উয়েফা এ লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল, ‘একটা তরুণ দল নিয়ে আমি শুরু করেছিলাম। এই দলের বড় শক্তি ফিটনেস। তারা লিগের দ্বিতীয় পর্ব থেকে শুরু করে এ টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত প্রতি ম্যাচে গড়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার দৌড়েছে। কোনো কোনো ম্যাচে প্রায় সাড়ে বারো কিলোমিটার। নিঃসন্দেহে যা বিশ্বমানের।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দলের তিন-চারজন খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা ১৩-১৪ মাইল দৌড়েছেন। এই যেমন লিগের দ্বিতীয় পর্বে মোহামেডানের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে সুফিল ও রকি দুজনেই ১৩ কিলোমিটারের ওপরে দৌড়েছেন। সে ম্যাচে দলের গড় ছিল সাড়ে বারো কিলোমিটার। সেন্টারব্যাকের মতো পজিশনে খেলেও মাহমুদুল হাসান কিরণের গড় ১২ কিলোমিটার।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, খেলোয়াড়েরা কত দৌড়ালেন, এটা জানার জন্য যে জিপিআরএস সিস্টেম থাকা দরকার, তা বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর আবার আছে নাকি! এখানেও আরামবাগ ব্যতিক্রম, এ ক্লাব বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে ব্যবহার করছে জিপিআরএস সিস্টেম। আধুনিক কোচ খ্যাত মারুফুলই প্রথম এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন দেশের ফুটবলকে। তবে সবকিছুর পেছনে ওই পরিশ্রম।
অনুশীলনে কতটা ঘাম ঝরালে ম্যাচে ১২ কিলোমিটার দৌড়ানো যায়, তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই তো দলের সাফল্যের পেছনে কোচ কৃতিত্ব দিচ্ছেন খেলোয়াড়দের পরিশ্রম ও শৃঙ্খলাকে। আর খেলোয়াড়েরা অবলীলায় বলে যাচ্ছেন, ‘আমরা কিছুই না। সব মারুফ স্যারের কৃতিত্ব।’