গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এমন মন্দা শেয়ারবাজারে মিরাকল (অলৌকিক ঘটনা) ঘটিয়েছে মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ। লোকসানে নিমজ্জিত হয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার দাম পছন্দের শীর্ষে ছিল গত সপ্তাহজুড়েই। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটিও দখল করেছে লোকসানে পড়া প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। আর কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে দাম বাড়ার কারণ তাদের জানা নেই।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২২ কোটি ১৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৯০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ২২ টাকা ৬০ পয়সা।
শুধু গত সপ্তাহ নয়, চলতি বছরের ২৬ নভেম্বরের পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২৬ নভেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৬ টাকা ৪০ পয়সা। সেখান থেকে ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম ২৯ টাকা ৮০ পয়াসায় উঠে। অর্থাৎ মাত্র ১১ কার্যদিবসে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা বা ৮১ দশমিক ৭১ শতাংশ।
কোম্পানিটির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার বিষয়ে ১০ ডিসেম্বর ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তা প্রকাশ করা হয়। ওই বার্তায় ডিএসই জানায়, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে ওই কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে এবং লেনদেন বেড়েছে, তার পিছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই। এরপরও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২১ সালের মার্চের পর কোম্পানিটি দীর্ঘদিন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে সম্প্রতি কোম্পানিটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৮১ পয়সা লোকসান করে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৭৬ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।
৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ২৬ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে, ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে এবং দশমিক ২০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে।
মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজের পরেই গত সপ্তাহে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল এইচআর টেক্সটাইল। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। ১৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন।
এছাড়া গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- সায়হাম কটনের ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিংয়ের ১৫ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ দশমিক ৫২ শতাংশ, লুব-রেফ বাংলাদেশের ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সায়হাম টেক্সটাইলের ৯ দশমিক ১৫ শতংশ এবং আমরা টেকনোলজিস এর ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ দাম বেড়েছে।