চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ (সাবেক বঙ্গবন্ধু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল) প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে ৫১৮ কোটি ৬১ লাখ ২১ হাজার ৬১৬ টাকা ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত কাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে সার-সংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টা দেখেছেন ও অনুমোদন করেছেন। এটি এখন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থান করা হবে। আগামীকাল বুধবার (৪ নভেম্বর) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দিলে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর একনেক থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। মূল ডিপিপি তে প্রকল্পটির মেয়াদকাল ছিল ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬৩২ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
পরবর্তী সময়ে বাস্তবতার নিরিখে চলতি বছরের ২৮ মে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় বর্ধিত প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়। সংশোধিত প্রথম ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। একই সঙ্গে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৭৬১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় পানি শোধনাগার স্থাপনের জন্য প্যাকেজের আওতায় ৪টি কম্পোনেন্ট রয়েছে।
২০২২ সালের ২৬ মে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকল্পটির ক্রয়কার্য হংকংভিত্তিক জেডএইচইসি-বিওডব্লিউ-এসএমইডিআরআইসি থেকে করার অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৪৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৮ টাকা। যার মধ্যে নির্মাণব্যয় ৪১০ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬৩১ টাকা এবং নির্মাণ পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ২৯ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার ৯৬৭ টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেডএইচইসি-বিওডব্লিউ-এসএমইডিআরআইসির সঙ্গে ২০২২ সালের ৫ জুলাই ক্রয় চুক্তি করে বেজা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি সরবরাহের জন্য ৫০ এমএলডি ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় মূল চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত পূর্ত কাজের আওতায় একটি ৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। যেখানে অপরিশোধিত পানি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে সরবরাহের লক্ষ্যে ৮০০ মিলি মিটার ডায়ার ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একটি ৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করার লক্ষ্যে ট্রান্সমিশন পাইপলাইনের একই রুট ব্যবহার করে ৮০০ মিলি মিটার ডায়ার একটি পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। যে কারণে একই রুট ব্যবহার করে দুটি ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে ও কারিগরী বিবেচনায় একই রুটে দুটি ৮০০ মিলি মিটার ডায়ার ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপন অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল।
এ জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউ এম) থেকে ৮০০ মিলি মিটার ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের পরিবর্তে এক হাজার মিলি মিটার ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। যার মাধ্যমে ২টি ৫০ এমএলডি ক্ষমতার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের অপরিশোধিত পানি পরিবহন সম্ভব হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধিত ডিপিপিতে সংস্থানের সাপেক্ষে নির্বাচিত ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত মূল চুক্তির ভেরিয়েশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই ভেরিয়েশনে ৮০০ মিলি মিটার ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের পরিবর্তে এক হাজার মিলি মিটার ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনসহ পানি শোধনাগারের প্রবেশ রাস্তা এবং পানি শোধনাগারের চূড়ান্ত লেআউটে মাটি ভরাট কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আগামীকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার টন চিনি এবং ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সার কেনার একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে।