ডিটিভি অনলাইন ডেস্ক:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নানান চাপের পরও র্যাবের মতো বিজিবি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেনি, গণগ্রেফতারেও অংশ নেয়নি বলে দাবি করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
তিনি বলেছেন, আন্দোলনে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে সেরকম বিজিবি করতে পারছে না, এরকম কথা আমাকে শুনতে হয়েছে। পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে থাকতে পারতাম কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারতাম না। সরকারি বাহিনীর প্রধান হয়ে সরাসারি আদেশ অমান্য করা দুষ্কর। পরিস্থিতি আপনারা জানেন। আমি যদি তখন সরকারের অর্ডার ডিনাই বা অমান্য করি তাহলে কি আমি আমার কর্মস্থলে ফেরত আসতে পারবো কি না তার গ্যারান্টি আপনি বা আমি কেউ দিতে পারতাম? তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডিনাই করেছি। আবারও বলছি, পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে (বিজিবি) থাকতে পারতাম কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারতাম না।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিজিবি সদর দপ্তরের আয়োজিত সার্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিবদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অনেকে বিজিবির গেটে মিষ্টি নিয়ে আসছে। বিজিবির এপিসির ওপরে অস্ত্র ছিল না। নরমালি কিন্তু এলএমপি বা মেশিনগান থাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক আহত। আহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে আমরা অনেককে আমাদের বিজিবি হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের এখনো আটজন চিকিৎসাধীন। তাদের যাবতীয় খরচ বিজিবি দিচ্ছে।
বিজিবি ডিজি বলেন, জুলাই মাসের শেষের দিকে যখন গণগ্রেফতার কার্যক্রম শুরু হলো তখন নির্দেশনা ছিল গ্রেফতার কার্যক্রমে অংশ নিতে। কিন্তু বিজিবি একদিনের জন্য একজন সদস্যও কাউকে গ্রেফতার করেনি। আমি বলেছি, গ্রেফতার কার্যক্রমের জন্য বিজিবি প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত না।
র্যাবের মতো হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, র্যাবের মতো বিজিবিকেও ছাত্র আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। আন্দোলনের মধ্যে বিজিবির হেলিকপ্টার একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এসব বলার বা পরিষ্কার করার সুযোগ তখন হয়নি। আমরা তখন কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, কী রকম প্রেসার ছিল তা আমাদের কমান্ডাররা জানেন।
তবে বিজিবি ডিজি বলেন, এরপরও একটা দুটো ঘটনা ঘটেছে। একজন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার অফিসার গুলি করছে। ওই ঘটনায় বিজিবি থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে শুধু ওএসডি করা হয়নি, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক শাস্তির জন্য সুপারিশ করে লে. কর্নেল পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তাকে বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যেন সেনাবাহিনীর অধীনে কার্যকর হয়। তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, তার সঙ্গে একজন মেজর ছিলেন। যদিও তিনি গুলি করেননি। তবে তিনি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তাকেও আমরা কিছুটা শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছি। বিষয়টি স্পষ্ট যে, যেন সে মনে করে কোনো কিছু করে পার পাওয়া যাবে না।
বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী দাবি করেন, অনেক ক্ষেত্রে এমন অনেক জায়গায় বিজিবি মোতায়েনই করা হয়নি, কিন্তু বিজিবির কথা বলা হয়েছে। একজন রিকশাচালক বলছেন, তার ছেলে বিজিবির গুলিতে মারা গেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে তাকে অনুদান দিয়েছি, জানতে চেয়েছি যে তিনি নিজে দেখেছেন কি না? তিনি বলেছেন, আমি তো দেখিনি। একটা বাহিনীর কথা বলেন যে, তাদের একজন এসে বিজিবির গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি বলে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, কখনো যদি প্রমাণিত হয়, আন্দোলনে বিজিবির হাতে কিছু ঘটেছে বা কেউ মারা গেছে তাহলে তার সুবিচার নিশ্চিতে যা করা দরকার তা করা হবে। এটা শুধু আপনাদেরই বলছি না, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিশনকেও আমরা একই কথা বলেছি।
৫ আগস্টে বিজিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ঢাকার ১৪টি এন্ট্রি (প্রবেশপথ) পয়েন্টে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকার যাতে বাইরে থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে। কারণ সেদিন গণভবন ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। আদেশ একটা জায়গা থেকে পাইনি, দেশের সর্বোচ্চ জায়গা, মন্ত্রী, সিনিয়র ব্যক্তি নাম বলছি না, তারা আমাদের প্রেসারের মধ্যে রেখে ১৪টি জায়গায় পাঠায়। টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, পোস্তগোলা, আশুলিয়াসহ ১৪টা জায়গায় ৮০/৯০ জনকে মোতায়েন করা হয়।
৫ আগস্ট দুপুরে যখন খবর নিতে ফোন করি, জানতে পারি, প্রত্যেকটি এন্ট্রি পয়েন্টে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে ছাত্র-জনতা আসছে। আমি বলেছি সবাই পোস্ট ছেড়ে দিয়ে সরে যাও। জাস্ট ভ্যানিস। কারণ এত পরিমাণ ছাত্র-জনতাকে গার্ড করার প্রয়োজন নেই। সেটা করতে গেলে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে। এভাবেই আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। এখন বিজিবি পূজার নিরাপত্তায়, যৌথবাহিনীর সঙ্গে অভিযানে কাজ করছে। এর বাইরে গাজীপুরের ৯ পদাতিক ডিভিশন আশুলিয়া শিল্প এলাকার নিরাপত্তায় কাজ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সরাসরি এ ধরনের কথা একটা বাহিনীর প্রধান হয়ে বলা দুষ্কর। সরাসরি বলতে গেলে বিভিন্ন পরিস্থিতি আপনারা জানেন। আমি যদি এ ধরনের অর্ডার ডিনাই বা অমান্য করি তাহলে আমি আমার কর্মস্থলে ফেরত আসতে পারবো কি না, তার গ্যারান্টি কি আপনি বা আমি কেউ দিতে পারতাম? তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডিনাই করেছি। যেমন গণগ্রেফতারে আমরা যাইনি। আবার মব কন্ট্রোল করার প্রশিক্ষণ পাইনি। পুলিশ যে রায়ট কন্ট্রোলের গিয়ার বা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে তা আমরা নিজ খরচে কিছু কিছু কিনে ব্যাটালিয়নে দিয়েছি। যাদের দিয়েছি তাদের মারণাস্ত্র দেইনি। আমরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করিনি। সেসময় বারবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা হতো। পুলিশ যে ভূমিকা পালন করছে সেরকম বিজিবি করতে পারছে না, এমন কথা আমাকে শুনতে হয়েছে। পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে থাকতে পারতাম কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারতাম না।
|