পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী ১৭ জুন। এরই মধ্যে ঈদের ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। বুধবার (১২ জুন) সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে লোকাল বাসের দৌরাত্ম্য যেন দেখার কেউ নেই। ঈদের আগমুহুর্তে ঘরে ফেরা মানুষের কাছে বাড়তি টাকা আদায় করছেন বাসের চালক-হেলপার-সুপারভাইজাররা। কোনো কোনো রুটে দুই গুণ বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যাত্রী বেশি দেখলেই ভাড়া বাড়ানো হচ্ছ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ য়াত্রীরা।
গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র জেলাভিত্তক লোকাল পরিবহন। বিশেষ করে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটের হয়ে ফরিদপুর, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা পর্যন্ত মানুষ খুব সহজেই চলাচল করতে পারেন। ফেরিঘাট পার হয়েও পাওয়া যায় এসব পরিবহন। তবে ঈদের আগে যাত্রীর চাপ থাকায় সুযোগ বুঝে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
গাবতলী রুট ব্যবহার করে নাটোর-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন লোকাল বাস সরাসরি সেবা দিয়ে থাকে। এসব জেলাভিত্তিক পরিবহন ঈদের আগে সেবা দিয়ে থাকে। তবে দুই রুটের বাসগুলোই এবার ঈদের আগে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
পুরো বাস টার্মিনাল ঘুরে, রাজশাহী যাবার অপেক্ষায় গাবতলী পর্বত সিনেমা হল সংলগ্ন ব্রিজের ওপরে অবস্থান করছেন মাজহারুল। তিনি বলেন, ‘ভ্যানে করে বাসাবাড়ি পরিবর্তনের কাজ করি ঢাকায়। ঈদের আগে মানুষ বাসা পরিবর্তন করে না তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি আগে।’
মাজহার আরও বলেন, রাজশাহীতে এর আগে ৩০০ টাকা হলেও এখন ৬০০ টাকা চাচ্ছেন গাড়িচালকরা। কিছু বললেই উল্টো কথা শোনানো হচ্ছে। কয়েকটি গাড়িতে উঠতে চাইনি যদি পরের গাড়িগুলো ভাড়া কম নেই এ আশায়। তবে সেই আশা আর নেই, সব লোকাল বাসগুলোই দ্বিগুণ করে ভাড়া আদায় করছেন। প্রথমে ৫০০ টাকা ভাড়া নিলেও এখন সেটা আরও ১০০ টাকা বাড়তি করে ৬০০ টাকা নিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামে যেতে হবে বলে জানান তিনি। একই অভিযোগ মন্টু, হায়দারসহ আরও কয়েকজনের।
গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সেলফি পরিবহন, পদ্মা পরিবহন সরাসরি যাত্রী বহন করছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত। এর সঙ্গে অন্যান্য বাস রয়েছে সেগুলোও এই দুই বাস সংশ্লিষ্টরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সকাল পৌনে ৭টার দিকে যাত্রী তুলনামূলক কম থাকায় এ বাসের সুপারভাইজার-হেলফার ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে যাত্রী উঠাতে থাকে।
তবে সকাল ৭টার পর পর যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ভাড়াও বাড়িয়ে দেন তারা। যাত্রী প্রতি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয় ভাড়া। যাত্রীর চাপ কিছু বাড়লে ভাড়া হয়ে যায় ১৮০ টাকা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বাসচালক-সুপারভাইজারের কাছে যেন অসহায় যাত্রীরা।
কথা হয় সীমা নামে এক যাত্রীর সাথে। তিনি বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকা এসেছিলাম। দুরপাল্লার বাসের টিকিট কাটতে পারিনি, আজ গ্রামের বাড়িতে যাবার জন্য এসেছিলাম। একটু আগে ভাড়া ১৫০ টাকা চাইছিল। এর ফাঁকে একটু সকালের খাবার খেয়ে ফিরে আসতে ১৫ মিনিটের কম সময় লেগেছে। এর মাঝেই ৩০ টাকা ভাড়া বেড়েছে। বাকি দিনগুলোয় কি হয় আল্লাহই ভালো জানেন।
একই অভিযোগ দিলেন হাইজুল। তিনি বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ শেষে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ি পাংশায় ফিরে যাবো কিন্তু ভাড়া বেশি চাচ্ছেন। এর আগে ১২০ টাকায় চলে এসেছি, আজ ১৮০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। আমরা দুরপাল্লার গাড়িতে উঠতে পারি না ভাড়া বেশি হওয়ায়, এখানেও দেখি ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে।
তবে এ নিয়ে কথথা বলে রাজি হয়নি কোন সুপারভাইজার বা হেলফার। তবে সেলফ পরিবহনের চালক শহিদ জাগোনিউজকে বলেন, ‘অন্যান্য সময় সাধারণত ১৫০ টাকা ভাড়া থাকে। এখন কিছুটা বেশি নেওয়া হচ্ছে এটা প্রতি ঈদেই হয়।’