ডিটিভি অনলাইন ডেস্ক:
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার পাসের হার কিছুটা বাড়লেও জিপিএ-৫ কমেছে। জিপিএ-৫ কমে যাওয়া ও কিছু বোর্ডে ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে গণিতের খারাপ ফলাফল। পাশাপাশি কিছু বোর্ডে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়েও শিক্ষার্থীরা খারাপ ফল করেছে। এ দুটি বিষয়ের অস্বাভাবিক ফল হওয়ায় অনেকে ফেল করেছে, আবার অনেকে জিপিএ-৫ পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।
বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণ ৯টি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে (কারিগরি বাদে) এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৮ লাখ ৯১ হাজার ৫৯ জন। এরমধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৩২ জন। অর্থাৎ, ১০টি বোর্ডে ফেল করেছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৬২৭ জন। এরমধ্যে শুধু গণিতে ফেল করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০২ জন। অর্থাৎ, ফেল করা শিক্ষার্থীদের অর্ধেকের বেশি গণিতে অকৃতকার্য হয়েছে।
এদিকে, ৯টি সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডে বাংলা, ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি), হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতিতে গড় পাসের হার ৯৬ শতাংশের ওপরে। বিপরীতে গণিতে পাসের হার ৯১ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ, ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী শুধু গণিতে ফেল করেছে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায় থেকে গণিতের দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের পেছনে মুখ্য কারণ।
বোর্ডভিত্তিক ফলাফলে গণিতে এ বছর সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে মাদরাসা বোর্ড। বোর্ডটিতে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই গণিতে ফেল করেছে। এরপর রয়েছে ঢাকা বোর্ড। এ বোর্ডে গণিতে ফেলের হার ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্ডে ১২ দশমিক শূন্য ০৪ শতাংশ, দিনাজপুরে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭ দশমিক ৬৩, বরিশালে ৭ দশমিক শূন্য ৪০ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে ফেল করেছে।
অন্যদিকে এবার গণিতে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে যশোর বোর্ড। এ বোর্ডটিতে গণিতে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
গণিত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অন্য বিষয়গুলোতে ফেলের হার তুলনামূলক কম। এরমধ্যে বাংলায় ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ইংরেজিতে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, রসায়নে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ, আইসিটিতে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, হিসাববিজ্ঞানে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও পৌরনীতিতে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ড. সমীর কুমার ভৌমিক বলেন, সব বিষয়েই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন। তবে গণিতের গুরুত্বটা আরও বেশি। গণিত চর্চার বিষয়। এটা মুখস্ত করার বিষয় নয়। শিক্ষার্থীরা যত বেশি গণিত চর্চা করবে, তত বেশি দক্ষ হয়ে ওঠবে। গণিতে দুর্বলতা দূর করতে অবশ্যই গণিতচর্চায় জোর দিতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষিত ভালো শিক্ষক থাকাটা জরুরি।
গণিতে এবার সবচেয়ে ভালো ফল করা যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, ২০২৩ সালের এইচএসসিতে যশোর বোর্ডের ফল খারাপ হয়েছিল। এরপর থেকে আমরা স্কুল-কলেজগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন সভা-সেমিনার করেছি। কেন ফল খারাপ হলো, সে বিষয়গুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিছু বিষয় চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ আমরা এবার এসএসসিতে বেশ ভালো ফল করেছি।
ফলাফলে দিক দিয়ে বোর্ডগুলোর মধ্যে তলানিতে থাকা (৭৩.৩৫ শতাংশ) সিলেট শিক্ষা বোর্ডে গণিতের পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞান ও আইসিটিতে খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। বোর্ডটিতে গণিতে গড় পাসের হার মাত্র ৮৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞানে গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর আইসিটিতে পাসের হার ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রমা বিজয় সরকার বলেন, ‘আমার বোর্ডে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিক ফল করেছে, যাতে বোর্ডের গড় পাসের হার কমে গেছে। এছাড়া মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশি ফেল করেছে। সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।’
ফলাফলে পিছিয়ে থাকাদের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ডের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এ বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। সাধারণ ৯টি বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লায় গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে শিক্ষার্থী। এ বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ গণিতে ফেল করেছে মোট শিক্ষার্থীর ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ।
কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল করিম বলেন, গণিতে প্রশ্ন তুলনামূলক কঠিন হওয়ার স্মরণকালের মধ্যে খারাপ ফল করেছে কুমিল্লা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এজন্য বোর্ডের জিপিএ-৫ কমেছে। গণিতে এত খারাপ হওয়ার কারণ খুঁজে বের করবো আমরা।
|