পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় দ্বিগুণের বেশি বাড়ছে। সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং ডুবোচরগুলো জেগে উঠায় ব্যক্তি মালিকানার জমিতে ড্রেজিং এর মাটি ফেলা যাচ্ছে না। এজন্য পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ১৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১হাজার ১৬২ দশমকি ৬৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পটি আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে (একনেক) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৪শ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও সবমিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে ৪ দশমিক ৮৬ ভাগ। মূল প্রকল্পের ৫ ভাগের কম ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া মূল ডিপিপি সংশোধন হলে আরো বিলম্ব হবে। এজন্য ভূমি অধিগ্রহণের এই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেতু বিভাগের আওতায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটির ২য় সংশোধনী ২০০৯ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি বর্তমানে ৫টি ভাগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক এবং সার্ভিস এরিয়া-২ এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণ এবং নদী শাসন কাজ চলমান রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মূল সেতুর ১ম স্প্যান স্থাপন করা হয়। বর্তমানে আরো দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে ১৫৩০ দশমিক ৫৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১ হাজার ২৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা সংস্থান রয়েছে। বর্তমানে সেতু বিভাগ ১৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ১১৬৬ দশমিক ৬৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে। সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী ১৫৩০ দশমিক ৫৪ হেক্টর জমির মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪৭২ দশমিক ৬০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১ হাজার ২৯৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং ৪০ দশমিক ৮১ হেক্টর জমি হুকুম দখল বাবদ ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে সেতু বিভাগ জানিয়েছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বিস্তারিত নকশা অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৩ সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের বিস্তারিত নকশা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে নদী শাসন কাজের চুক্তিতে ড্রেজিং করে ৬ কোটি ঘনমিটার বা ২১২ কোটি ঘনফুট মাটি নির্ধারিত স্থানে ফেলার লক্ষ্য ছিলো। এজন্য জাজিরা প্রান্তে মূল সেতুর উজান ও ভাটির ডুবোচর এলাকায় কিছু স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সর্বশেষ ২য় সংশোধিত ডিপিপি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে অনুমোদনকালে চিহ্নিত স্থানের জমিগুলো ডুবোচর ছিলো এবং সেখানে কোন চাষাবাদ বা জনবসতি ছিলো না। যে কারণে সেসময় আলাদা করে জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হয় নি। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বিলম্বে শুরু হওয়ায় নদীর গতি-প্রকৃতিও পরিবর্তন হয়। ফলে মূল ডিজাইনে চিহ্নিত স্থানগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে যায় এর ফলে জমির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। জমির মালিকরা ভরাট জমিতে বসতি স্থাপন এবং চাষাবাদ শুরু করে। এজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ড্রেজিং করে মাটি ফেলতে পারেনি। অন্যদিকে জাজিরা প্রান্তে মূল নদীশাসন কাজের সীমানার কিছু অংশ পানির নিচে অবস্থিত হওয়ায় ইতোপূর্বে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। ফলে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে চাইছে সেতু বিভাগ।