ডিটিভি বাংলা নিউজঃ গত মে পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় সাড়ে ১৭ শতাংশ আদায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ৩৪ হাজার কোটি টাকা। তাও এ ঘাটতি অর্থবছরের শুরুতে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রার নয়, কমিয়ে আনা লক্ষ্যামাত্রার হিসাবে। এনবিআরের প্রাথমিক হিসাবে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস অর্থাত্ জুলাই থেকে মে পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা নেওয়া হলেও বছরের শেষ দিকে এসে তা কমিয়ে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থবছর শেষে কমিয়ে আনা এ লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে চলতি জুন মাসে এনবিআরকে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। অর্থবছরের শেষ মাস হিসেবে রাজস্ব আদায় অন্যান্য মাসের চাইতে বেশি হলেও এত বিশাল পরিমাণ রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারাও। গত অর্থবছরের জুনে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছিল ২৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এর আগের বছরের জুনে ২১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা আদায় করেছিল। লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জন করা যাবে, তা এখনই বলা কঠিন মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আমরা চেষ্টা করবো। বিভিন্ন প্রকল্পের উেস অগ্রিম আয়কর, বকেয়া আদায় বাড়ানোর মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
আগামী অর্থবছরের জন্য ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে ইতিমধ্যে বাজেটে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক হচ্ছে না। এর ফলে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে আদায়ের বিস্তর ফারাক থাকছে। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, বাজেটে বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাহাবা আদায় করা গেলেও বছর শেষে আদায়ের বিশাল ব্যবধান থাকছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে তা জনমনে গুরুত্ব হারাবে। ৩০ শতাংশের উপরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে অবাস্তব ও অর্জনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আদায় সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে অতীতের ন্যায় চলতি অর্থবছরের ন্যায় আগামী অর্থবছরেও শেষদিকে এসে ফের সংশোধন করে কমিয়ে আনতে হবে। এনবিআর আয়কর, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও আমদানি পর্যায়ে আরোপিত শুল্ক খাত থেকে মোটাদাগে রাজস্ব আদায় করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, রাজস্ব আদায়ে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে রয়েছে আয়কর বিভাগ। গত ১১ মাসে ৬৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয়কর আদায় হয়েছে ৫১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ৮১ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৭৯২ কোটি টাকার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ১০ হাজার ২১১ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসে শুল্ক আদায় অপেক্ষাকৃত সন্তোষজনক। আলোচ্য সময়ে ৬২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি বিশাল হওয়ার পেছনে গত বছর রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান বিভ্রাট সমাধান করাকেও অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই এনবিআর ও সরকারি হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কার্যালয়ের তথ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল। গত অর্থবছর তা সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। এনবিআরের নতুন প্রশাসন এই ব্যবধান কমানোর উদ্যোগ নেয়। তাতে দেখা যায়, সিজিএ’র প্রকাশিত হিসাবই সঠিক। অর্থাত্ কেবল গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরেই এনবিআর প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান বাড়িয়ে দেখিয়েছিল। গত অর্থবছর শেষে এনবিআর রাজস্ব আদায় ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা দেখালেও সম্প্রতি তা সমন্বয় করে ১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকার হিসাব চূড়ান্ত করে এনবিআর। এর উপর ভিত্তি করেই রাজস্ব আদায় ও নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।