বিসিএস ছাড়া ক্যাডার সার্ভিস নয়’-দাবিতে শিক্ষকদের দুই দিনের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবারও অচল ছিল দেশের সরকারি কলেজগুলো। এদিনও কলেজগুলোয় কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি, বন্ধ ছিল পাঠদান কার্যক্রম। পরীক্ষা দিতে পারেনি অন্তত পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী। এতে ছয় মাসের সেশনজটে পড়ার শঙ্কা তাদের। জাতীয়করণের জন্য ঘোষিত কলেজশিক্ষকদের ক্যাডারবহির্ভূত রেখে বিধিমালা জারির দাবিতে গত রোববার থেকে দুই দিনের কর্মবিরতি পালন করেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। ‘বিসিএস ছাড়া ক্যাডার সার্ভিস নয়’-স্লোগান নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রাখেন তারা।
জাতীয়করণ হওয়া ও হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের বিসিএস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সোমবার দেশের সাড়ে ৩০০ সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষা ক্যাডারদের অধীনে সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সকাল থেকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। দুই দিনের কর্মসূচি শেষে আজ মঙ্গলবার থেকে কর্মস্থলে ফেরার কথা রয়েছে শিক্ষকদের। জাতীয়করণ হওয়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা হলে আগামী ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারি আবার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা রয়েছে তাদের। অন্যদিকে শিক্ষকদের এ কর্মসূচির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গত রবি ও সোমবারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল রবি ও সোমবার।
গতকাল বিভিন্ন কলেজ ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষকদের এ কর্মসূচি পালনের কারণে দেশের সব সরকারি কলেজ খোলা থাকলেও পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। নিজ নিজ কলেজের সামনে শিক্ষকরা অবস্থান নেন। কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারী বিসিএস শিক্ষকরা বলেন, জাতীয়করণকৃত কলেজশিক্ষকদের যদি শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে আত্তীকরণ করা হয়, তাহলে লাগাতার অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। জাতীয়করণ শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি মেনে নেবে না। ক্যাডারবহির্ভূত রেখেই জাতীয়করণকৃত কলেজশিক্ষকদের সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রয়েছে। তাই কোনোভাবেই তাদের ক্যাডারভুক্তের কোনো কারণ নেই।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার এ প্রসঙ্গে গতকাল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সকাল থেকে সব সরকারি কলেছে কর্মবিরতি চলছে। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের পাশাপাশি অফিসিয়াল কার্যক্রমও বন্ধ আছে। আমরা (শিক্ষকরা) যার যার প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ সভা করছি।’ দেশের যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই, সেখানে একটি করে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারীকরণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে সারা দেশে ২৮৩টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে।
এর আগে যেসব বেসরকারি কলেজকে সরকারীকরণ করা হয়েছে, সেগুলোর শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা হয়েছে। আর এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছেন বিসিএস শিক্ষকরা। নতুন করে সরকারীকরণ করা কলেজগুলোর শিক্ষকদের কী মর্যাদা দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত করেনি সরকার। বিসিএস শিক্ষকরা ওই শিক্ষকদের আত্তীকরণ নিয়ে সুস্পষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক বিভিন্ন সরকারি কলেজে কর্মরত রয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংকট সমাধানে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়, এমন কর্মসূচি থেকে শিক্ষকদের সরে আসার আহ্বানও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। দেশের ২৮৩টি বেসরকারি কলেজকে নতুন করে জাতীয়করণ করার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তবে ওইসব কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত বিবেচিত হবেন, নাকি ‘নন-ক্যাডার’ হবেন, সেটি এখনো ঠিক করতে পারছে না মন্ত্রণালয়। তাদের বদলি ও পদোন্নতি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, সেটিও ঠিক হয়নি। বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত না হলেও মন্ত্রণালয় তিনটি বিকল্প প্রস্তাবের খসড়া নিয়ে কাজ করছে।