ডিটিভি অনলাইন ডেস্ক:
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরাম নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
রোববার (১৮ জুলাই) রাতে নিহত কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরামের মা জোছনা বেগম বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেন। এর আগে বহদ্দারহাটে গুলিতে কলেজশিক্ষার্থী তানভির সিদ্দিকী হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনকে আসামি করা হয়।
ছাত্রহত্যা: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আরেক মামলা১৬ জুলাই মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে অন্তত পাঁচ ব্যক্তিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়
বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘নিহত ওয়াসিম আকরামের মা বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।’
মামলার অন্যান্য আসামির মধ্যে রয়েছেন- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশিস পাল, সাবেক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী, জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাস, চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক, কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, গিয়াস উদ্দিন মোবারক আলী, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি।
এছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে মো. ইসমাইল, মো. দেলোয়ার, এন. এইচ. মিন্টু, মোহন ঘোষ, মো. আলী, ভূবন ঘোষ, আরহাম খান, ইসমাইল উদ্দিন লিটন, দৌলত খান, এনামুল হক মানিক, নুর মোহাম্মদ, মো. সোহেল, নেজাম উদ্দিন, মো. আমজাদ হোসেন, ইরফানুল আলম তুষার, ইব্রাহিম খলিল, জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, নুর নবী সাহেদ, শহীদুল ইসলাম, সাগর দাস, জাহেদ হোসেন, জি. এম. তৌশিফ, সাদ্দাম হোসেন ইভান, দেবাশীষ পাল দেবু, মো. জাবেদ, মহিউদ্দিন, মো. জাফর, মো. আলী (সাহেদ), মহিম আজম, দিদারুল আলম, মো. ইলিয়াছ, মো. আলী, মো. ইসহাক, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মো. মাসুম, জিহান আলী খান, মহিউদ্দিন শাহ, মুজিবুর রহমান রাসেল, মোহাম্মদ রাশেদসহ আরও ১০৮ জনকে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাদীর ছেলে ওয়াসিম আকরাম নগরের মুরাদপুর এলাকায় কর্মসূচিতে অংশ নেন। মামলার আসামিদের নির্দেশে ও নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হয়। তারা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে বাদীর ছেলে ওয়াসিম আকরাম নিহত হন।
সেদিন কি ঘটেছিলো: পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১৬ জুলাই নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ১২টা থেকেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে কয়েকশ ছাত্রলীগকর্মী রেলস্টেশনে অবস্থান নেন। ফলে ষোলশহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মুরাদপুর মোড়ে অবস্থান নেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিকেল তিনটার পর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকেন মুরাদপুরের দিকে। এ সময় রাস্তার আশপাশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মারধর করা হচ্ছিলো। মিছিল থেকে মুরাপুরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর শুরুতেই হামলা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশ আশপাশের অলিগলিতে ঢুকে পড়লে সেখান থেকেও খুঁজে বের করে হামলা করা হয়। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে অন্তত পাঁচ ব্যক্তিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তাতে তিনজন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম। চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী ফারুক। সেদিন সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন প্রায় দুইশজন।
|