‘ডাকসুর সাবেক ভিপি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুকে আদালতে রিমান্ড শেষে নিয়ে আসার সময় গণমাধ্যমে যে চিত্র এসেছে তা যে কোনো বিবেকবান মানুষকে আলোড়িত করবে। রিমান্ডে এমনভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে যে তিনি দাঁড়াতেই পারছে না।’
শনিবার (২৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলম গীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে অবৈধ সরকার। কোটা আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে। এ ধরনের বর্বরোচিত অমানবিক কাজ পুরো সংকট আরও ঘনীভূত করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি সাঈদ খানকে গত ২৫ জুলাই গভীর রাতে তার মগবাজারের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে এবং রাতভর নির্যাতন চালায়। তারপর সাঈদ খানকে মেট্রোরেল পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, কয়েকদিন আগে গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নয়াব আলীর একটি চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জহিরউদ্দিন স্বপন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ জন জাতীয় নেতা ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা হয়েছে।
গতকাল যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসায় তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে তার ভায়রা, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানসহ অসংখ্য মানুষের বাড়ি বাড়ি ডিবি পুলিশ তল্লাশি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা আগলে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদ ধরে রেখেছে। তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যার ঘটনা, সাজানো রায় দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা, ৫০ লাখ নেতাকর্মীর নামে বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে হয়রানি এবং খুন-গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে।’
‘এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার সৃষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা-নির্যাতনের পর এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সাজানো মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী মতের নেতাদের হত্যা, গ্রেফতার, গুলি করে আদালতে উঠানোর আগেই নির্যাতন করে পঙ্গু করা হচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আবারো নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেখানে রিমান্ডের ন্যূনতম আইন মানা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনী রচনা করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতারের পাশাপাশি এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও ব্লক রেড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে, আইডি কার্ড দেখামাত্রই গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের গুম করে কীভাবে নির্যাতন করে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে তা তাদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই অনুধাবন করা যাচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে সাংবাদিক সাঈদ খানসহ এ পর্যন্ত গ্রেফতার বিএনপি ও বিরোধী দলের সব নেতা এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান।