গুলি করে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। মঙ্গলবার (১৬ মঙ্গলবার) বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য নুরুজ্জামান হীরা প্রমুখ।
মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বলেন, পুলিশ সারা দেশে ন্যক্কারজনকভাবে শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালিয়েছে। এতে সংবাদ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রামে তিনজন এবং ঢাকায় একজন শিক্ষার্থীসহ মোট পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে। ভয়াবহ এবং নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে আমরাসহ পুরো জাতি স্তব্ধ।
নেতারা বলেন, গত দুদিন ধরে সারা দেশে সরকার তার পুলিশ এবং হেলমেটবাহিনী ছাত্রলীগকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রশস্ত্রযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করেছে। এরই নৃশংস ফলাফল হলো শিক্ষার্থীদের মৃত্যু এবং এই হত্যাকাণ্ড।
নেতারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দানবীয় পদ্ধতিতে দেশটায় আতঙ্ক তৈরি করতে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়েছে। এখন দেশবাসীর করণীয় হলো এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে ঠেকাতে হবে। ইতোমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়েছে। সোমবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণ্ডাবাহিনীকে রুখে দিয়েছিল।
নেতারা বলেন, সরকার একদিকে হাইকোর্ট দিয়ে তামাশা অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে ব্যবহার করছে। কাজেই দেশবাসীকে এই আন্দোলনের পাশে অকুণ্ঠচিত্তে দাঁড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেখানেই নিপীড়িত হচ্ছে সেখানেই জনগণকে দাঁড়াতে হবে। কেন না দেশকে সরকার মেধার ভিত্তিতে নয়, নতজানু দাসদের দিয়ে পরিচালনা করতে চায়।
সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী রাজাকারের সন্তান কোন নীতি বলে পুনরায় রাজাকার হতে পারে? না নীতিশাস্ত্র, না আইন, না রাষ্ট্রনীতি, কোনো বিচারেই তো রাজাকার হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে সরকার দেশে রাজাকার-রাজাকারের সন্তান কিংবা মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিকৃত করে বিভাজনের খেলা খেলেই যাচ্ছে।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে জাতীয় সংসদে কোটাবিষয়টা উত্থাপন করে কমিশন গঠন করার আহ্বান জানানো হয়। সারা দেশে হওয়া গুলি, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি উত্থাপিত হয়।
নেতারা আরও বলেন, বিপুল গণঅভ্যুত্থান ও জাগরণের মধ্য দিয়ে যদি এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন হটানো না যায় তাহলে এই দেশের গণতন্ত্র ও গণমানুষের মুক্তি নাই; দেশেরও কোনো ভবিষ্যৎ নাই।