৭ মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বীরাঙ্গনা মনোয়ারা
4, April, 2018, 11:47:20:AM
শ্রীমঙ্গলে একাত্তরের এক বীরাঙ্গনা মনোয়ারা বেগম। পাক হানাদারদের কাছে অকথ্যভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে অপমানে আর লাঞ্ছনায় দিন কাটিয়েছেন। গত বছর সরকার তাকে বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। এতে তিনি স্বীকৃতি পেলেও স্বস্তি মেলেনি। তার মাথা গোজার এক খণ্ড জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এলাকার প্রভাবশালী একটি চক্র।
তাদের দায়ের করা সাতটি মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মনোয়ারা বেগম ও তার পরিবার। শুধু তাই নয় তার পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তিনিসহ ছেলে ও ছেলের বৌ রক্তাক্ত হয়েছিলেন।
সুবিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের ওপর দায়ের করা মামলার মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন, দোকান ভাঙচুর এবং মারামারির অভিযোগ। বর্তমানে তিনি শ্রীমঙ্গল শহরের সোনার বাংলা রোডে এক বাবুর্চির বাসায় আশ্রয় নিয়ে আছেন।
ওই চক্রটি মনোয়ারা বেগমের একখণ্ড জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতে তার পরিবারের সদস্যদের কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বীরাঙ্গনা মনোয়ারা বেগম তার ছেলে স্বপন (৩৫) ও ছেলে বৌ শিল্পীকে। উল্টো মনোয়ারার ছেলে স্বপনের ওপর মিথ্যা নারী নির্যাতনসহ একের পর এক বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অসহায় পরিবারটিকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হন মনোয়ারা বেগম। দীর্ঘ দিন পর ২০১৭ সালে বর্তমান সরকার তাকে বীরাঙ্গনা খেতাবে অন্তর্ভুক্তি করে গেজেট প্রকাশ করে। দেশ স্বাধীনতার পর থেকে এক ছেলে ও ছেলে বৌকে নিয়ে সাতগাঁও রেলস্টেশনের পেছনে একখণ্ড জমিতে ঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছেন।
মনোয়ারা বেগমের অভিযোগ, এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে তার মাথা গোজার জায়গাটুকু বিক্রির জন্য চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করতে রাজি না হলে ওই জমি থেকে জোর জবরদস্তিমূলক ৪ শতক জমি দখলে নিয়ে নেয়। বর্তমানে মনোয়ারার দখলে থাকা অবশিষ্ট প্রায় ১০ শতক জমি দখল উচ্ছেদের জন্য মামলা দিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে।
স্বামীহারা বীরাঙ্গনা মনোয়ারা বেগম বলেন, একাত্তরে অত্যাচারিত হয়েছি পাকা হানাদের হাতে, আর এখন নির্যাতন-অত্যাচারের শিকার হচ্ছি দেশীয় প্রভাবশালীদের হাতে। তারা টিনের বেড়ার ঘরে রাত-বিরাতে ঢিল ছুড়ে, একটা মুরগি পালতে পারি না। ছাগল পালতে পারি না। সব চুরি হয়ে যায়। যেখানে গেছি সেখানেই দেখেছি বেশি টাকা যেখানে বিচার সেখানে। আমরা প্রতিকার চাওয়ার আগেই উল্টো মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।