মেঘালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শনে গিয়ে আপ্লুত রাষ্ট্রপতি
9, March, 2018, 11:50:13:PM
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের যে সব স্থানে অবস্থান করেছিলেন; স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর সেই সব স্থান পরিদর্শনে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হলেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
পাঁচ দিনের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সকালে আসামের গুয়াহাটির বরঝড়া বিমানবন্দর থেকে সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে মেঘালয় রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গুমাঘাট, মৈলাম ও বালাত অঞ্চলে পরিদর্শনে যান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। এ সময় তার সঙ্গে স্ত্রী রাশিদা হামিদসহ বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডার থাকাকালীন তিনি এসব স্থানে মুক্তিযুদ্ধাদের সঙ্গে অবস্থান করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সেই স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আসা তার দায়িত্ব ছিল। এতদিন পর এসে মনে হচ্ছে সেই দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন তিনি।
স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বালাটে গিয়ে দুঃসময়ের সব বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হলেও দু-একজনের দেখা পেয়েছেন তিনি। উত্তাল সেই দিনগুলোয় সময় পার করা সাধারণ চায়ের দোকানও তার কাছে হয়ে ওঠে বিশেষ কিছু। সেই সময়ের স্মৃতিও অকপটে বলে গেছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বালাটে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের দুইজন মানুষকে পেয়ে সেই সময়ের স্মৃতির ঝাঁপি খোলেন আবদুল হামিদ। মারাক ও রজত নামের দুই আদিবাসীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ চলে তার স্মৃতিচারণা।
এ সময় সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের আবদুল হামিদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা (বালাট অঞ্চলের মানুষ) অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষকে তারা আশ্রয় দিয়েছে। নিজেরা কষ্ট স্বীকার করেছে।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ১০ বছরের মধ্যে আসতে পারলে ওই সময়ের অনেকের সাথে দেখা হতে পারত। সমাজে ওই সময় প্রতিষ্ঠিত যারা ছিল, তারা এখন বেঁচে নেই। যেখান থেকে সাহায্য পেয়েছি, সেখানে এত বছর পরেও আসতে পারাটা আমার জন্য মানসিক শান্তির। অনেক স্মৃতি এখানে।”
আবদুল হামিদ বলেন, “দেশ স্বাধীনের পর নানা ব্যস্ততায় আসতে পারিনি। ‘৭৫ এর পর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল। ‘৯৬ এর পর আসতে পারতাম।
বালাটে গিয়ে দুঃসময়ের সব বন্ধুকে না পেলেও দুই-একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার বালাটে গিয়ে দুঃসময়ের সব বন্ধুকে না পেলেও দুই-একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার “আমার ফ্যামিলিসহ এখানে ছিলাম। না আসাটা মাঝে মাঝে মনে পীড়া দিত। মনে হত বেঈমানি করছি। আসাটা আমার দায়িত্ব ছিল। আজ মনে হচ্ছে, দায়িত্ব পালন করলাম।”
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শনের পর হেলিকপ্টার যোগে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে যান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় শিলং বিমানবন্দরে পৌঁছালে সেখানে তাকে স্বাগত জানান রাজ্যটির সদ্য নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। এ সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
শিলংয়ে অবস্থাকালে রাষ্ট্রপতি পুলিশ বাজার রাজভবনে অবস্থান করবেন। এ ছাড়াও শিলংয়ের লাবাঙ এ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাসভবন পরিদর্শনসহ শিলংয়ের দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করবেন।
শনিবার রাষ্ট্রপতি শিলং থেকে আসামের গুয়াহাটি বিমানবন্দর হয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। সেখানে আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক সোলার সামিটে যোগ দেবেন তিনি। এ সামিটে প্রায় ২৩টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও নয়জন মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
আইএসএ একটি প্রথম চুক্তিভিত্তিক আন্তর্জাতিক ও আন্তঃসরকারি সংস্থা যার সদর দফতর ভারতে। এর সচিবালয় হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁও জেলায়। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে এবং সৌর শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলাঁদ ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স (আইএসএ) গঠন করেন।
আইএসএ সৌর শক্তি সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি জোট; যা থেকে তারা তাদের বিশেষ জ্বালানি চাহিদা মেটায় এবং সর্বসম্মতিক্রমে ঘাটতিগুলো চিহ্নিতকরণে একটি জোট গঠনে সহায়তা করবে।