সংঘর্ষের ঘটনায় হত্যাসহ তিন মামলা, আসামি ১৩০০, গ্রেপ্তার নেই
21, April, 2022, 1:07:58:PM
নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে আসা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের পেটাচ্ছেন নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানের কর্মচারীরা। তাঁদের অভিযোগ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ নিয়ে সত্য তথ্য প্রকাশ করছেন না সাংবাদিকেরা। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ বাধে। দিবাগত রাত ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এরপর আজ মঙ্গলবার সকালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী দফায় দফায় সংঘর্ষ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষে এলাকা ফাঁকা হয়ে যায় ঢাকা কলেজের ছাদে শিক্ষার্থীদের অবস্থান পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল রাতে বিপুল পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও আজ দুপুর পর্যন্ত কাউকে নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়নি। দুপুরের পর পুলিশের দুটি গাড়ি ওই এলাকায় আসতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক মিরপুর রোডে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ আছে। সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে আসা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের অন্তত তিনজন সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনকে পেটাতে দেখা গেছে দোকানকর্মীদের। তাঁদের মধ্যে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি ও এসএ টিভির দুই সাংবাদিক রয়েছেন। সময় টিভির ওই সাংবাদিককে নিউমার্কেট থেকে নীলক্ষেত মোড়ে এনে পেটাতে শুরু করেন দোকানকর্মীরা। এসএ টিভির ওই ক্যামেরাপারসনের মাথা ফেটে গেছে।দোকানকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করায় তাঁকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে তাড়িয়ে দেন দোকানকর্মীরা। নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ চলছে নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ চলছেছবি: তানভীর আহম্মেদ হামলার শিকার অন্যজন একজন ফটোসাংবাদিক। তাঁকে নীলক্ষেত মোড় থেকে ধাওয়া দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যান দোকানকর্মীরা। সাংবাদিকদের ওপর হামলার কারণ জানতে চাইলে নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, যে সাংবাদিকেরা সত্য কথা লেখেন না, তাঁদের চলে যেতে বলা হচ্ছে। কাউকে মারধর করা হচ্ছে না। বেলা একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। আজ সকাল থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে দুই পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটি অংশ কলেজের ছাদে, আরেকটি অংশ চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে নিউমার্কেট ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিউমার্কেট, রাফিন প্লাজা, বলাকা সিনেমা হল ও গাউছিয়া মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় ছাদে থাকা ঢাকা কলেজের ছাত্ররা ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল ছুড়ছেন। ব্যবসায়ীরাও নূরজাহান মার্কেটের ছাদ থেকে ইটপাটকেল ছুড়ছেন। চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে থাকা ঢাকা কলেজের ছাত্ররা কিছুক্ষণ পরপরই ব্যবসায়ীদের ধাওয়া দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও পাল্টা ধাওয়া দিচ্ছেন।সংঘর্ষের ঘটনায় হত্যাসহ তিন মামলা, আসামি ১৩০০, গ্রেপ্তার নেই নিজস্ব প্রতিবেদক রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল বুধবার গভীর রাতে হত্যাসহ মোট তিনটি মামলা করা হয়েছে। পথচারী নাহিদ হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা এসব মামলায় ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকার মিলে মোট এক হাজার ৩০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। নিউমার্কেট থানায় তিন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শরীফ ফারুকুজ্জামান। আজ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পথচারী নাহিদ হত্যা মামলায় চারজন ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি আসামিরা অজ্ঞাতনামা। ভিডিও ফুটেজ ও তদন্তে এসব অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় আজ আহত যে দোকান কর্মচারী মারা গেছেন সে বিষয়ে আরেকটি মামলা হবে । নিউমার্কেট থানা সূত্র জানায়, গত সোমবার মধ্যরাত থেকে নিউমার্কেট এলাকায় দোকান মালিক, কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। রাতে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরদিন গত মঙ্গলবার দিনভর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পথচারী নাহিদ হাসান নিহত হন। গতকাল বুধবার ঢাকা কলেজের সামনে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। নিউমার্কেট থানার পুলিশ জানায়, গতকাল বুধবার রাতে নাহিদ হত্যায় তাঁর চাচা মো. সাঈদ বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে নিউমার্কেট থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান বাদী হয়ে নিউ মার্কেটের ২৪ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৯০০ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন নিউ মার্কেট থানার আরেক উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়ামিন কবির।