দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) স্মল ব্রাঞ্চের তিনজন সংসদ সদস্য। ওই তিনজন সংসদ সদস্য হলেন অস্ট্রেলিয়ার সংসদের লেবার পার্টির এমপি মার্গারেট কোয়ার্ক, জিব্রাল্টার সংসদের এমপি হর্ন এডউইন রেইস ও নেভিস আইল্যান্ডের এমপি ফেরেল স্মিথেন। তারা বলেছেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য দরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সংসদ সদস্যদের জবাবদিহি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা। এগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও বড় নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
এই তিন আইনপ্রণেতার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিদিনের সংবাদের সিনিয়র রিপোর্টার গাজী শাহনেওয়াজ
তিন সংসদ সদস্য জানান, স্মল ব্রাঞ্চের সদস্য দেশগুলোর দুর্নীতির বিষয়টি ততটা গভীর নয়। তবে, সম্প্রতি মাল্টার একজন সাংবাদিক অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গিয়ে নিহত হন, বিষয়টি তাদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। নিহত সাংবাদিকের স্মরণে গত শুক্রবার এই সম্মেলনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তারা বলেন, রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলে দুর্নীতি হ্রাস পায়। অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির এমপি মার্গারেট কোয়ার্ক বলেন, ‘দুর্নীতি দমনে সংসদগুলো কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, সে বিষয়ে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছি। সুপারিশগুলোর মধ্যে তথ্যের অবাধপ্রবাহ, দুর্নীতি নির্মূলে সাংবাদিকদের কার্যকর ভূমিকা পালন, সরকারি ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সংসদ সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রোল মডেল অনুসরণ করা।’ পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রাজনীতিবিদদের সচেতনমূলক প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জলবায়ু ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার এই এমপি বলেন, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব এখন ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোসহ সবার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো এই হুমকিতে রয়েছে। এই অঞ্চল থেকে অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অন্যত্র ঠিকানা খুঁজে নিতে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, ৬৩তম সিপিএ সম্মেলনে কোনো চূড়ান্ত প্রস্তাবনা হয়তো হবে না। তবে এই দেশগুলোর অংশগ্রহণকারী এমপিরা নিজ নিজ দেশে ফিরে তাদের সংসদে এই বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারেন।
জিব্রাল্টার সংসদের এমপি হর্ন এডউইন রেইস বলেন, তার দেশের সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনাটি এই ফোরামে তুলে ধরা হলে সবাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সিপিএভুক্ত রাষ্ট্রের সংসদকে এটা নিশ্চিত করতে হবে, সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীনভাবে তাদের অনুসন্ধিৎসু রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারেন। ‘আমি মনে করি, সাংবাদিকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে জানি না কোথায় কী ঘটছে, তবে একজন সাংবাদিক জানেন জনগণের সমস্যা-সংকটগুলো কোথায়, তা তুলে ধরতে পারেন। এর মাধ্যমে সমস্যা ও সংকটগুলো জানতে পারি। এ কারণে আমি মনে করি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করে দেওয়ার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়।’
এমপি এডউইন আরো বলেন, ‘আমরা স্মল ব্রাঞ্চে সুশাসনের কথা বলেছি; যেমন ধরুন পুলিশ তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। সুশাসনটা এমন একটা বিষয় যেটি অনুভব করা যায় তখনই, যখন জনগণ বুঝবে, সরকার তার জন্য কী করছে।’ জলবায়ু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্বকে এখন আক্রান্ত করছে। ক্যারিবীয় আইল্যান্ড রাষ্ট্রগুলো ও মধ্য-আমেরিকার অনেক দেশেই এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ভূ-মধ্যসাগর পারের আমাদের দেশটিও বাদ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ছোট রাষ্ট্রের কার্বন নিঃসরণে কোনো ভূমিকা নেই, কিন্তু বড় রাষ্ট্রগুলোর কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এর দায়ভার তাদেরই নিতে হবে।’ স্মল ব্রাঞ্চের সদস্য দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যেমন সৌরশক্তি ও সমুদ্রের ঢেউ ও ভূ-গর্ভস্থ তাপ ব্যবহারের দিকে নজর দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
নেভিস আইল্যান্ডের এমপি ফেরেল স্মিথেন বলেন, দুর্নীতি দমনে সংসদ সদস্যরা যা করছেন তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘যেমন ধরুন আপনি সংসদের একজন অর্থমন্ত্রী, কিন্তু পরে যখন আপনার দল ক্ষমতার বাইরে থাকবে, তখন আপনি বিরোধী দলের সদস্য। বিরোধীদলীয় এমপি হিসেবে যদি সেই সময়ে আপনি সরকারের অর্থের ব্যবহারের বিষয় জানতে চান, তাহলে আপনি যখন ক্ষমতায় (অর্থমন্ত্রী) ছিলেন তখন আপনার ভূমিকা কী ছিল, সে বিষয়টিও সামনে চলে আসবে।’
এই এমপি নিজের দেশে দুর্নীতির প্রসঙ্গে বলেন, নেভিসে অর্থাৎ তার দেশে দুর্নীতিটা তেমন ব্যাপক নয়। কারণ তার দেশের জনগণ অনেক বুদ্ধিমান এবং তারা জানেন তাদের অধিকার কী। ফলে সেখানে দুর্নীতি করার সুযোগটা খুবই কম। জলবায়ু বিষয়ে ফেরেল স্মিথেন বলেন, ‘এইটা এখন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। উদ্বুদ্ধ এই বিষয়টি মোকাবিলায় আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ধাবিত হতে হবে, যার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণের ক্ষতিকর মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’